'সাধারণ' থাকা নিয়া
মানুষ ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে যাইতে পারে না। তাঁর বিবর্তনই তো ঝুট-ঝামেলা দিয়া তাহলে সে সাধারণ হবে কেমন! সময়,সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আপনাকে এক্সিট করতে হলে সেখানকার সমস্যা গুলো অতিক্রম করতে পারতে হবে…
‘সাধারণ’ থাকতে চাওয়াটা একটা মধ্যবিত্ত ফ্যালাসি। আর হুমায়ুন আহমেদ হইল এই ফ্যালাসির অন্যতম প্রবর্তক। তিনি একটা মধ্যবিত্ত সমাজ নির্ধারিত রুলস নিয়া আসছেন যেগুলো আসলে ক্লিশে বিষয়। ভ্যালু নাই। ফেইক একটা ভ্যালু ভাব ধারা ছাড়া আরকি।
’সাধারণ’ হইতে চাওয়াতে সমস্যা নাই আসলে। কিন্তু সাধারণ হইতে গেলে নানান অহংকারের মইদ্যে দিয়া যাইতে হয়। যেটা থেইকা উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। গৌতম বুদ্ধের একটা কথা আছে তিনি বলতেন—
"যখন তুমি সমস্ত সাহায্য প্রত্যাখ্যান করবে তখন তুমি মুক্ত।"
তাহলে আমরা কি সমস্ত সাহায্য প্রত্যাখ্যান করব? না। এজ হিউম্যান বিং আমরা অন্যের সাহায্য ব্যাতিত চলতে পারি না। যারা পারেন তাঁরা হয়তো দেবতা অথবা শয়তান। বুদ্ধের এই কথার অর্থ নজরুলের “রুদ্রমঙ্গল” প্রবন্ধের 'আমি' মতন। তিনি সত্যকে নমস্কার করতাছেন। সকল প্রকার জুট-মেকি থেকে দূরে থাকতে চাইছেন সত্যকে একমাত্র পথ ধরে। তাঁর পথ দেখাবে তাঁর সত্য। মানে নিজের পথ নিজেরই তৈরি করা লাগবে নিজের সত্যে নিজেরই সন্ধান করা লাগবে। পরনির্ভরশীলতার থেকে মুক্তি পাইতে হবে। সে যাগ্গে…
আমাদের সাধারণ থাকাটা মূলত আকাঙ্ক্ষা আর অহংকার পরভূত না হওয়া। এটা তো সম্ভব না। আমরা আকাঙ্ক্ষা নিয়া সব কাজ করি। এই আকাঙ্ক্ষা আবার আসে অনুকরণ থেকে। এভাবেই জিজায়ার তৈরি হয়। এখানে সাধারণ হইতে চাওয়া একটা ডিজায়ার যেটা আকাঙ্ক্ষা থেকে আসে।
সাধারণ থাকতে চাওয়ার ভিতর দিয়া জাহির হয় এই দেখো আমি কত সাধারণ আমি অন্য আর পাঁচজনের মত না। হিডেন মেসেজ এই যে আমাকে অন্য পাঁচ থেকে আলাদা কইরা দেখো। এইভাবেই অহংকার আসে। অহংকার সামাজিক স্টাটাস বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। সময় সময় এটা দরকারীও বটে। সরলতার তো সব পরিস্থিতে দেখানো যাবে না। এই দেখানোতে ভ্যালু নাই। উল্টো ক্ষতি হওয়ার আশংকাই বেশি আরকি।
সবাই সাধারণ হবে না। সাধারণ হওয়ার দরকারও হয় না সাধারণ হইয়া টিকে থাকাও টাফ তাহলে এই সাধারণ হইতে চাওয়ারে সন্দেহ করুন। সাধারণ দিয়া কোন কিসুরে ডিনাই করার ব্যাপার আছে। ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ারে সাধারণ হিসাবে ধইরা নেওয়া হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তয় আপনি সাধারণ হইতে চাওয়ার ভিতর কি চাচ্ছেন আসলে? আপনার অধিকার ছাড় দিতাছেন নাকি আপনার সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনারে অস্বীকার করতাছেন? এইগুলো সাধারণ হইতে চাওয়ার আগে ভাইবেন আরকি…
হুমায়ুন আহমেদের উক্তি 'সাধারণ হইতে পারা একটা অসাধারণ কাজ' এটার মহত্ত্বে মূলত এটা বুঝিয়েছেন হয়তো মানুষ সাধারণ হইতে পারে না। কারণ মানুষ ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে যাইতে পারে না। তাঁর বিবর্তনই তো ঝুট-ঝামেলা দিয়া তাহলে সে সাধারণ হবে কেমন! সময়,সমাজ এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আপনাকে এক্সিট করতে হলে সেখানকার সমস্যা গুলো অতিক্রম করতে পারতে হবে। এভাবে আপনার সাথে দেখা হবে টাউট,প্রতারক,লুৎরাজ, জুলুমকারী সহ নানাবিদ ক্লাউনদের সাথে তহন তো আপনার সাধারণ হইতে চাওয়া কামে আসবে না। একটা গেঁড়াকলে পইড়া যাইবেন আরকি…
আমাদের সমাজ রাষ্ট্র সাধারণ না আপনিও সাধারণ হইতে পারবেন না। যতটুকু এড়িয়ে যাবেন তাতে আপনি যেই সেন্সে সাধারণ হইতে চান ওটা সাধারণ হওয়া না। ওটারে বড় জোর এড়িয়ে চলা বলা যায়।
সাধারণ হইতে চাইলে আপনাকে লুকাইতে হবে আপনার স্টাটাস, সুনাম, সম্পদ, বংশগত বৃত্তি নইলে সমাজ বা রাষ্ট্র আপনাকে সাধারণ হতে দিবে না।সাধারণ হওয়া অর্থ সমাজ বা রাষ্ট্র বিমুখ হওয়া একপ্রকারের পারিবারিক এক্সজিসটেন্সকে ডিনাই করা ক্ষেত্রে বিশেষে।
তয় ক্লাস হায়ারার্কিতে সাধারণ হওয়ার বিষয়ে অবশ্য ভিন্নতা আছে। উপরোক্ত আলোচনা হুমায়ুন আহমেদ এর মিক্লা(মিডল ক্লাস) নিয়া। তো এই হায়ারর্কিতে এলিটক্লাস যদি শহর বিমুখ জীবন যাপন শুরু করে তাঁদের ধইরা নেওয়া হয় সহজ-সরল মানুষ। একদম ফকিন্নি লেভেলের মানুষের কথা বলার এক্সেস দেওয়া, তাঁদের কথা আমলে নেওয়া। একধরনের রাজনীতি টাইপ হাইপ থাকে আরকি… লোয়ার ক্লাসের লোকজন যাঁরা গ্রামে বসবাস করে তাঁদের সহজ-সরল সাধারণ জীবন যাপনের কথা বলি। যদিও তাঁদের ভিতর সমাজিক দ্বন্দ্ব লোগে থাকেই। মহাজন এবং মাতব্বরদের দৌরাত্ম্যে ভিতর কূটনীতি কইরা তাঁদের টিকে থাকা লাগে। তাই তাঁদের সাধারণ জীবন যাপন করে বলা যায় না। তাঁদের ভিতর কুটিলতা রক্ত মিশে আছে। টিকে থাকার সংগ্রাম ভালো মানুষ বা সাদাসিধা হওয়ার সুযোগ ছিল না।
মানুষ মূলত সাধারণ জীবন যাপন করতে চায় না। এক অর্থে সম্ভবও না।
যাঁরা বলেন আমি সাধারণ জীবন যাপন করি বা করতে চাই এরা মূলত বলার জন্য বলে। ফেইক কথা বলে। সত্য বলাতে সৌন্দর্য কম রুডনেস থাকে। ডিনাই বা অস্বীকৃতি থাকে। এই কারণ আনাদের নানান ফর্মে মুখোশ পড়ে থাকতে হয়। এই কারণে মুখোশে চল আছে থাকবে।